পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ' ফরজ ' নামাযগুলো "রাকাত" গুলো সমান নয় কেন???

"নামাজ " ফারসি শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ, রহমত, দোয়া, প্রার্থনা ইত্যাদি। যার আরবি শব্দ "সালাত "। 


ফরজ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত কিন্তু প্রতি ওয়াক্তে নামাজের রাকাতের সংখ্যা কম বা বেশি। ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকাত, যোহরের চার, আছরের চার, মাগরিবের তিন আবার এশার চার রাকআত নামাজ ফরজ৷ একেক ঘটনা ও কারণের ভিত্তিতে নামাজের রাকআতের সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা যায়।





 1). ফজরের নামাজ: আদম আ. যখন জান্নাতের নিষিদ্ধকৃত ফল খেয়ে ফেললেন তখন আল্লাহ'তা আলা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন৷ আর তখন পৃথীবি ছিল অন্ধকার। আদম আ. জান্নাতে কখনো অন্ধকার দেখেন নি তাই তিনি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন৷ আল্লাহ আদম আ. এর দোয়া কবুল করেন। তখন আদম আ. দেখলেন আস্তে আস্তে আলো ফুটে উঠছে। মানে সুবহে সাদিক হচ্ছে৷ তখন তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দু'রাকাত নামাজ আদায় করেন যা পরবর্তীতে উম্মতে মুহাম্মদের উপর ফরজ করা হয়। 

 এছাড়াও ফজর নামাজ হচ্ছে মুমিন মুসলমানদের আলাদা করার নামাজ। আল্লাহকে বিশ্বাসী ব্যাতিত কেওই এত সকালে উঠে নামাজ আদায় করবে না, আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে না। এজন্য ফজরের নামাজকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 



 2). যোহরের নামাজ: ইব্রাহিম আ. শৈশবে থাকাকালীনই তার স্রষ্টা নিয়ে ভাবতেন। রাতের আধারে নক্ষত্র দেখে ভাবতেন এ আমার প্রভু তারপর যখন তা মিলিয়ে যেতো তখন তিনি চাঁদকে ভাবলেন এ হয়তো আমার প্রভু হবে কিন্তু চাঁদও যখন স্থায়ী হয় নি তখন তিনি ভাবলেন সূর্য তো সবার বড়, সবচেয়ে তাপ দেয় এ নিশ্চয় আমার প্রভু৷ কিন্তু সূর্যও যখন দুপুরের পর আস্তমিত হওয়া শুরু করলো তখন তিনি তার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন বললেন আমি শিরক থেকে মুক্ত৷ আমি এদের থেকে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকারির এক আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। তারপর তিনি, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ এতে খুশি হন। আর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে যোহর নামাজ চার রাকাত যা আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। 

 এছাড়াও যোহরের সময় ফেরেসতারা আসমানে তাসবীহ তাহলিল করে, এ সময় আসমানের দরজা খুলে যায় আর দোয়া কবুল হয়।তাই এ সময় নামাজ ফরজ করা হয়েছে। 





 3). আসরের নামাজ: ইউনূস আ. যখন মাছের পেটে ছিলেন তখন তিনি সমুদ্রের অন্ধকার,, মাছের পেটের অন্ধকার,, সেই মাছকে অন্য একটি মাছ গিয়ে ফেলছিল তার অন্ধকার ও রাতের অন্ধরার,,, এ সকল অন্ধকার দেখছিলেন৷ তখন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন আর আল্লাহ উনাকে আছরের সময় মাছের পেট থেকে বের করে নেন।

 তখন তিনি এ সকল অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর কাছে চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। আর তা আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। 



 4). মাগরিবের সময়: ইয়াকুব আ. যখন বহু বছর ইউসুফ আ. এর শোকে আধীর ছিলেন তখন তার কাছে একদিন এক বাহক ইউসুফ আ. এর জামা এনে দিলেন। তা ইয়াকুব আ. এর মুখের উপর রাখার পর উনার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তখন তিনি বাহককে জিজ্ঞাসা করেন ইউসুফ আ. কোন ধর্মের উপর আছে?? বাহক উত্তর দেয় যে তিনি ইব্রাহিমের দ্বীনের উপরেই রয়েছে। তখন ইয়াকুব আ. আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। 

প্রথম রাকাত আদায় করেন তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য, দ্বিতীয় রাকাত আদায় করেন ইউসুফ আ. বেঁচে আছে বলে আর তৃতীয় রাকাত আদায় করেন ইউসুফ আ. ইব্রাহিমের দ্বীনের উপরে অটল আছে বলে৷ আর সে সময়টা ছিল সূর্যাস্তের পর পর৷ মানে মাগরিবের সময়৷ এ ঘটনা থেকে মুহাম্মদ সা. এর উম্মতদের উপর তিন রাকাত নামাজ ফরজ করা হয়৷ 


 5). এশার নামাজ: মূসা আ. তার লোকদের নিয়ে নীল নদ।পার হওয়ার সময় চার ধরনের চিন্তা করতে লাগলেন। *নিজে সুস্থভাবে পার হওয়া। *স্বজাতিকে পার করা৷ *ফেরাউনকে পরাজিত করা। *ফেরাউনকে ধ্বংশ করা। আল্লাহর সাহায্যে যখন তিনি নীল নদ পার হলেন আর চিন্তামুক্ত হলেন তখন কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে চার রাকাত নামাজ আদায় করলেন। আর সে সময়টা ছিল সূর্যাস্তের অনেকটা সময় পরে মানে এশার ওয়াক্ত। 


এ থেকেই এশার নামাজ চার রাকাত ফরজ করা হয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

ইহুদীরা কেন 'গারকাদ' গাছ লাগায়

বাংলাদেশ আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এখানে ক্ষেত্রফল না বলে আয়তন বলা হল কেন ???

ফিলিস্তিনীদের অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও কেন তারা পাথর দিয়ে যুদ্ধ করে