মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন কিংবা পানি নেই। তবু কেন মানুষ সেখানে বসবাসের চিন্তা করছে





এটি হল মঙ্গলগ্রহের উত্তরাঞ্চলের করোলেভ গহ্বর। সাদা যে পদার্থটি দেখা যাচ্ছে তা হল জলের বরফ। গহ্বরটির ব্যাস প্রায় ৮২ কিমি, বরফের আচ্ছাদিত অংশটির ব্যাস প্রায় ৬০ কিমি এবং গভীরতায় প্রায় ২ কিমি। এতে যে পরিমাণ জল বরফ হিসেবে রয়েছে তার পরিমাণ কানাডার গ্রেট বিয়ার হ্রদের সাথে তুলনীয়। 





 এতেই শেষ নয়। মঙ্গলগ্রহেও পৃথিবীর মত দুই মেরুতে প্রচুর পরিমাণ বরফ রয়েছে। উত্তরমেরুতে রয়েছে বেশ বড় জলের বরফের আচ্ছাদন। দক্ষিণ মেরুতেও কঠিন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আচ্ছাদনের নীচে সঞ্চিত রয়েছে জলের বরফ। এমনকি এই অঞ্চলে তরল জলের সন্ধানও মিলেছে। 



 মঙ্গলগ্রহের উত্তর মেরু 




 মঙ্গলগ্রহের দক্ষিণ মেরু 





 তবে মঙ্গলগ্রহে অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। এমনিতেই সেখানকার বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা, তার ওপর তার প্রায় ৯৬% কার্বন-ডাই-অক্সাইড। অক্সিজেন আছে মাত্র ০.১৩%। তবে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করারও উপায় রয়েছে। দুটি পদ্ধতি রয়েছে। ১) বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে তাকে তড়িৎবিশ্লেষণ করলে উৎপন্ন হবে কার্বন-মনোক্সাইড এবং অক্সিজেন। নাসা এই বিক্রিয়াটি মঙ্গলগ্রহে করে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই 'পার্সিভিয়ারেন্স' মহাকাশযানে করে একটি এক্সপেরিমেন্ট পাঠিয়েছে। পার্সিভিয়ারেন্স আগামীকাল (১৮/০২/২০২১) মঙ্গলগ্রহে ল্যান্ড করতে চলেছে। বহুরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে সে লালগ্রহের বুকে। যদি কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরির এই পরীক্ষা সফল হয় (এডিটঃ পরীক্ষাটি সফল হয়েছে) তবে এরপর নাসা এর ১০০ গুণ বড়মাপের একইরকম একটি যন্ত্র পাঠাবে যেটি ঘণ্টায় ২ কেজি করে অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে। সেই অক্সিজেন ভবিষ্যতের মঙ্গলযাত্রীদের জন্য বা ভবিষ্যতের কোনও রকেট যা মঙ্গলগ্রহ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে- তার জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য সেখানে একটি ট্যাঙ্কে জমিয়ে রাখা হবে।






 পার্সিভিয়ারেন্স রোভার 




 যেভাবে আগামীকাল পার্সিভিয়ারেন্স মঙ্গলগ্রহে নামবে 




 অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র যা পার্সিভিয়ারেন্স বহন করে নিয়ে গেছে ২) কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিবর্তে জলও ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই জলকে তড়িৎবিশ্লেষণ করলেই উৎপন্ন হবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। এভাবেও অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীদের এভাবেই অক্সিজেনের যোগান দেওয়া হয় (নীচের যন্ত্রের সাহায্যে)। 




 পাশাপাশি যে হাইড্রোজেন পাওয়া যাচ্ছে তার সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিক্রিয়া ঘটালে তৈরি হবে মিথেন (CH4) এবং জল। এই মিথেন হল উৎকৃষ্ট রকেট জ্বালানী। 



অর্থাৎ এভাবে মঙ্গলগ্রহ থেকে ফিরে আসার জ্বালানীও তৈরি করে নেওয়া যাবে। এই বিক্রিয়াও ইতিমধ্যেই করা হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের জলের যোগানের জন্য (নীচের যন্ত্রটির সাহায্যে)। ইলন মাস্ক যে স্পেসশিপ তৈরি করছেন মঙ্গলগ্রহে মানববসতি নির্মাণের জন্য তা মিথেন ও অক্সিজেন চালিত। তিনি অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে এই বিক্রিয়া করার উপযুক্ত একটি যন্ত্র সেখানে পাঠাতে চান। তাহলে আমরা মঙ্গলগ্রহে জল ও অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য যে বিক্রিয়াগুলি দেখলাম তা নিম্নরূপঃ 





 দেখা যাচ্ছে মঙ্গলগ্রহের বুকে বসতি স্থাপনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি- অক্সিজেন, জল ও জ্বালানী- সেখানে উপলব্ধ। সরাসরি না পাওয়া গেলেও কিছু বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি খাটিয়ে এইসব উপাদান সেখানে তৈরি করে নেওয়া সম্ভব।

Comments

Popular posts from this blog

ইহুদীরা কেন 'গারকাদ' গাছ লাগায়

বাংলাদেশ আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এখানে ক্ষেত্রফল না বলে আয়তন বলা হল কেন ???

ফিলিস্তিনীদের অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও কেন তারা পাথর দিয়ে যুদ্ধ করে